"দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তুলে টেকসই উন্নয়নের অগ্রদূত হওয়া"
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি অপরিহার্য। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে উন্নয়ন সম্ভব নয় — যদি না সেই সম্পদকে সঠিক পরিকল্পনায় কাজে লাগানো যায়। তেমনি কেবল জনসংখ্যা বেশি হলেই উন্নয়ন হয় না; প্রয়োজন সেই জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও দক্ষতায় প্রস্তুত করা।
কারিগরি শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা একজন শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনে নির্দিষ্ট একটি পেশায় সরাসরি নিযুক্ত হতে সহায়তা করে। আর বৃত্তিমূলক শিক্ষা হল দক্ষতা-ভিত্তিক সেই প্রশিক্ষণ, যা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পেশা নির্বাচন ও আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করে। সাধারণ শিক্ষার বিপরীতে, কারিগরি শিক্ষা অর্জনের পর শিক্ষার্থী তার জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত্তিতে সহজেই একটি পেশা বেছে নিতে পারে।
কারিগরি শিক্ষার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এর ব্যবহারিক প্রয়োগ। এতে শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে পারে, স্থানীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পাড়ি জমায়। কিন্তু তাদের মাত্র ২৩% দক্ষ, বাকি ৭৭% অদক্ষ বা আধা-দক্ষ। দক্ষতার অভাবে তারা কম মজুরি, কম সুযোগ-সুবিধায় কাজ করতে বাধ্য হয়। অথচ যদি এদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে তারা উচ্চ আয়, উন্নত জীবনমান এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া আজ উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। অথচ ১৯৭০ সালে এসব দেশের জিডিপি বাংলাদেশের সমকক্ষ ছিল।
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে ১৯৬০ সালে গঠিত হয় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, এবং ১৯৬৭ সালে গঠিত হয় কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কারিগরি শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার করা হয়।
বর্তমানে দেশে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স এবং চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে।